বিবরণ |
১. তোমাকেঃ পঞ্চকন্যা বইটি হুমায়ূন আহমেদ এর পাঁচটি উল্লেখযোগ্য উপন্যাস নিয়ে সাজানো হয়েছে। প্রথম উপন্যাস টি হলো তোমাকে ।একই ধরণের বই অনেক লিখেছেন লেখক। আমি পড়েছি কয়েকটি। কিন্তু তবুও ভালো না বেসে পারা যায়না। এখানেই লেখকের মৌলিকতা, বিশেষত্ব। গল্পটি একটি একান্নবর্তী পরিবারের এক কন্যার জবানীতে পারিবারিক পরিবর্তনশীলতার কাহিনী। সব বদলে যায়। মা-বাবা, বোনের সাথে বোনের সম্পর্ক। প্রেম, কিংবা অভিমান বাসা বাঁধে মনের গহীনে অজান্তেই। অনেক সময় অনাত্মীয়ও হয়ে ওঠে আত্মীয়ের থেকে বেশি। ভালোমানুষ নানাবিধ সামাজিকতার জালে জর্জরিত হয়ে পা বাড়ায় কু-অভ্যাসে। এসব বিষয় অত্যন্ত সাবলীল ভাষায় বর্ণনা করেছেন লেখক। আর কি মায়াময় লেখনী। আমার সামাজিক গল্প ভালো লাগেনা সেভাবে। কিন্তু ইদানীং লক্ষ্য করছি এই জাতীয় গল্প অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়ি আমি। আমিও বদলে যাচ্ছি। কমবেশি। হাহাহা। ভালো লেগেছে সম্পূর্ণ গল্পটি, বার বার পড়ার মতো উপাদান এতে রয়েছে। ২. আমার আছে জলঃ রেল স্টিশনের নাম “সোহাগী” এই স্টেশন থেকে উপন্যাস এর শুরু। রিটায়ার্ড আইজি ওসমান সাহেব তার স্ত্রী, দুই মেয়ে নিশাত, দিলু, আর ও আছে নিশাতের শিশুকন্যা, দুই যুবক একজনের নাম জামিল অন্য জন সাব্বির। সাব্বির একজন প্রবাসী ফটোগ্রাফার। এছাড়া ও সাথে দুইজন কাজের লোক এবং তাদের সাথে যুক্ত হয়েছেন সোহাগী থানার ওসি। ওসমান সাহেব সপরিবার নীলগঞ্জ ডাকবাংলো ছুটি কাটাতে এসেছেন। এই উপন্যাসটা মুলত দিলু এবং নিশাতকে নিয়ে এরাই গল্পের প্রধান চরিত্র। নিশাত,, অসম্ভব রুপবতী একটা মেয়ে। বিয়ের কয়েক বছর পরই তার স্বামী মারা যায়।তার স্বামী ছিল কবির। আমুদে ছেলে।হৈচৈ করতো সবসময়। প্রচুর মিথ্যে কথা বলতো।নিশাতের মতে কবির এমন ছেলে যে পৃথিবীর যে-কোনো মেয়েকে বিয়ে করেই সুখী হতো।এই সব ছেলেদের সুখী হওয়ার ক্ষমতা অসাধারণ।কিন্তু নিশাত সুখী হতে পারেনি। দিলু,,, দিলুর বয়স চৌদ্দ বা পনেরো। এই বয়সে চেনা মেয়েগুলিকে ও অচেনা লাগে।বড় বেশি আবেগী মেয়ে অল্পতেই তার চোখে পানি আসে। ডাকবাংলোতে আসার পর থেকেই দিলু জামিলের প্রতি অন্য এক টান অন্য রকম অনুভূতি অনুভব করতে থাকে। দিলুর মা রেহানা বেগম সেটা বুঝতে পারেন এর জন্য তিনি বিরক্ত হয়ে আছেন। এদিকে ফটোগ্রাফার সাব্বিরের নিশাতকে পছন্দ হয় এবং সে তাকে বিয়ে করতে রাজি হয়। নানা ঘটনার পর জামিল এর সাথে নিশাতের সম্পর্কের কথা জানতে পারে। এখন কি করবে দিলু? জামিল বা পরিবারকে জানাবে কি তার ভালবাসার কথা। সুন্দর একটা বই যারা পড়েননি পড়ে ফেলুন তারাতারি। ৩. আকাশ জোড়া মেঘঃ এই বই শুরুতে আমার কাছে অতোটা ভাল লাগেনি। সংলাপ ভাল ছিল, কিন্তু কাহিনীর মধ্যে কোন বিশেষত্ব খুজেঁ পাচ্ছিলাম না। তবে শেষের দিকের চমক টা পুরো গল্পকে অসাধারণ করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট।এমনকি অভিভূত। গল্পে ফিরোজ চরিত্রটিকে কিছুটা হিমু চরিত্রের মত মনে হয়। ফিরোজের হিমুর মত বাউন্ডুলে স্বভাব আছে, অকারণে রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করার বাতিক আছে। মানুষকে হঠাৎ হঠাৎ চমকে দিয়ে মজা দেখার প্রবণতা আছে। তবে হিমুর মধ্যে মহাপুরুষের কিছু গুণাবলী আছে যা ফিরোজের মধ্যে নেই। ফিরোজ অহরহ মিথ্যা কথা বলে। যেটা নায়কের চরিত্রের সাথে খুব বেমানান হতে পারে তবে বাস্তবসম্মত। ৪. একজন মায়াবতীঃ অসম্ভব মুগ্ধতা নিয়ে পড়ছিলাম বইটি। শেষ পর্যন্ত এই মুগ্ধতা ধরেও রেখেছিল। কিন্তু শেষে মনজুর এর সাথে কার মিল হবে এটা নিয়ে দোটানায় পড়ে গেছিলাম। আমি চাচ্ছিলাম জাহানারা কে কিন্তু মনে হল মীরার সাথেই মিল হবে। একটু ক্লিয়ার করলে কী এমন দোষ হতো। যাইহোক আমি সন্তুষ্ট। আসলে গল্পটিতে জটিল মানব মনের জটিল সব ভাবাবেগ তুলে ধরা হয়েছে । আধুনিক ধারার লোক দেখানো আর চাটুকারিতা ছাপিয়ে ভালোবাসাকে একটা নতুন মাত্রা দেওয়া হয়েছে। যে ভালোবাসা ধরা যায় না,ছোঁয়া যায় না। শুধু অন্তর দিয়ে অনুভব করতে হয়। ৫. সে ও নর্তকীঃ স্বাতী ভেবে রেখেছিল সে তার জন্মদিনে লিলিকে ব্যাপারটা বলবে। ভয়ংকর অন্যায় যে সে করেছে সে-ব্যাপারটা। লিলি আতঙ্কে শাদা হয়ে যাবে। পরপর কয়েকবার বলবে, এখন কী হবে রে। নিজের আতঙ্ক অন্যের ভেতর দেখলে নিজের আতঙ্ক খানিকটা কমে। স্বাতী খানিকটা স্বস্তি পাবে। এবং কিছুটা সাহসও পাবে। সেই সাহসটা পাবার পর স্বাতী ব্যাপারটা তার মা’কে বলতে পারবে। আশা করছি, হুমায়ূন আহমেদ এর পঞ্চকন্যা বইটি পড়ে আপনাদের ভালো লাগবে। হুমায়ূন আহমেদ (Humayun Ahmed) এর অন্যান্য বাংলা বই ডাউনলোড করতে আমাদের সাইট ভিজিট করুন আর পঞ্চকন্যা বইটি আপনাদের কেমন লাগলো তা জানতে ভুলবেন না। |