বিবরণ |
'হুমায়ূন আহমেদ রচনাবলী'র দ্বাদশ খণ্ডে স্থান পেয়েছে আটটি উপন্যাস, যেগুলোর মধ্যে ছটির রচনাকাল ১৯৯২। একটি লেখা ১৯৯৪-তে, আরেকটি ১৯৯৭ সালে। চারটি ভাগে এই রচনাগুলি সংকলিত হয়েছে— উপন্যাস, হিমু উপাখ্যানমালা, শুভ্র উপাখ্যানমালা ও কিশোর উপন্যাস। হুমায়ূন আহমেদের চরিত্রসৃষ্টির পেছনে ছিল জীবনকে দেখার এবং মানুষের মনোলোকে ঢুকে পড়ার তাঁর ক্ষমতা। তিনি জানতেন জীবনের একটি বড় পরিচয় এর বৈচিত্র্য। চারদিকের জনজীবনে তিনি চোখ রেখে দেখতেন, শুধু যে মানুষ-মানুষে পার্থক্য আছে, প্রভেদ আছে তা নয়, একই মানুষের ভেতরেও অনেক মানুষ বাস করে। মানব মনের রহস্যময়তার সূত্র ধরে প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের মনের নানা ব্যাখ্যাতীত সম্পর্ক নিয়ে তিনি ভেবেছেন, নাগরিক মানুষ যে এর প্রকাশগুলো আড়ালে রাখে (অথবা সেগুলো শনাক্ত করতে অপারগ হয়) কিন্তু প্রকৃতি-সান্নিধ্যে এলে সেগুলো নিজ থেকে প্রকাশিত হয়ে যায়, এ বিষয়টিও তাঁকে ভাবিয়েছে। তাঁর হিমুর মনোবিশ্ব এক অনন্ত রহস্যের জায়গা, এর নানা অদলবদল, পটপরিবর্তন হিমুকে কখনো কোনো স্থির পরিচয়ে, স্থির কেন্দ্রে আবদ্ধ রাখে না। মিসির আলিতে তিনি নিজে আছেন, সম্ভাব্য অনেকেই আছেন। একজন মনোবিজ্ঞানী যদি অপ্রকৃতকে প্রকৃতের মতো গুরুত্বে মাপেন, তাঁকে শুধু বস্তুতে বিশ্বাসী বলা যাবে না, আবার তাকে অপ্রকৃতের সন্ধানীও বলা যাবে না। কিন্তু হুমায়ূন আহমেদ আমাদের জানান, বিজ্ঞানী, রহস্যবাদী বাউলসাধক অথবা সওদাগরি অফিসের বাস্তবপীড়িত কেরানি, সকলের আছে একটি উত্তরাধিকার, এবং তা হচ্ছে মানববৈচিত্র্য আর মনোজগতের নিরূপণ-অসম্ভব বোধ অনুভূতি। |