লেখক | কাজী নজরুল ইসলাম |
---|---|
বিষয় | চিরায়ত কাব্য বিষয়ক বই |
প্রকাশক | আগামী প্রকাশনী |
ISBN | 9789840418176 |
---|---|
পৃষ্ঠা সংখ্যা | 64 |
সংস্করণ | 9th Printed, 2015 |
দেশ | বাংলাদেশ |
ভাষা | বাংলা |
বিবরণ | বিষের বাঁশী"" বইয়ের ভূমিকার অংশ থেকে নেয়া:“অগ্নি-বীণা” দ্বিতীয় খণ্ড নাম দিয়ে তাতে যে সব কবিতা ও গান দেবাে বলে এতকাল ধরে বিজ্ঞাপন দিচ্ছিলাম, সেই সব কবিতা ও গান দিয়ে এই বিষের বাশী” প্রকাশ করলাম। নানা কারণে ‘অগ্নি-বীণা” দ্বিতীয় খণ্ড নাম বদলে “বিষের বাশী” নামকরণ করলাম। বিশেষ কারণে কয়েকটি কবিতা ও গান বাদ দিতে বাধ্য হলাম। কারণ ‘আইন’-রূপ ‘আয়ান ঘােষ’ যতক্ষণ তার বাশ উঁচিয়ে আছে, ততক্ষণ বাঁশীতে তথাকথিত বিদ্রোহ-রাধার নাম না দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। ঐ ঘােষের পাের বাঁশ বাঁশীর চেয়ে অনেক শক্ত। বাঁশে বা বাশার্বাশী লাগলে বাঁশীরই ভেঙে যাবার সম্ভবনা বেশী। কেননা, বাঁশী হচ্ছে সুরের, আর বাঁশ হচ্ছে অসুরের।এই বাঁশী তৈরীর জন্যে আমার অনেক বন্ধু নিঃস্বার্থভাবে অনেক সাহায্য করেছেন। তাঁরা সাহায্য না কলে এ বাঁশীর গান আমার মনের বেণুবনেই গুমূরে মত। এঁরা সকলেই নিঃস্বার্থ নিষ্কলুষ প্রাণ-সুন্দর আনন্দ-পুরুষ। আমার নি- খরচা কৃতজ্ঞতা বা ধন্যবাদ পাবার লােভে এঁরা সাহায্য করেননি। এরা সকলেই জানেন, ওসব বিষয়ে আমি একেবারেই অমানুষ বা পাষাণ। এঁরা যা করেছেন, তা স্রেফ আনন্দের প্রেরণায় ও আমায় ভালােবেসে। সুতরাং আমি ভিক্ষাপ্রাপ্ত ভিক্ষুকের মত তাদের কাছে চির-চলিত কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তাদের আনন্দকে খর্ব ও ভালােবাসাকে অস্বীকার করব না। এঁরা যদি সাহায্য হিসাবে আমায় সাহায্য করতে আসূতেন, তাহলে আমি এঁদের কারুর সাহায্য নিতাম না। যারা সাহায্য করে মনে মনে প্রতিদানের দাবী পােষণ করে আমায় দায়ী করে রাখেন, তাঁদের সাহায্য নিয়ে আমি নিজেকে অবমানিত করতে নারাজ। এতটুকু শ্রদ্ধা আমার নিজের উপর আছে। স্রেফ তাঁদের নাম ও কে কোন্ মালমসলা জুগিয়েছেন তাই জানাচ্ছিনিজেকে হালকা করার আত্মপ্রসাদের লােভে। |
লেখকের নাম | কাজী নজরুল ইসলাম |
---|---|
পরিচিতি | কাজী নজরুল ইসলাম ২৪ মে ১৮৯৯ – ২৯ আগস্ট ১৯৭৬; ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ – ১২ ভাদ্র ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ) বিংশ শতাব্দীর প্রধান বাঙালি কবি ও সঙ্গীতকার। তার মাত্র ২৩ বছরের সাহিত্যিক জীবনে সৃষ্টির যে প্রাচুর্য তা তুলনারহিত। সাহিত্যের নানা শাখায় বিচরণ করলেও তার প্রধান পরিচয় তিনি কবি তাঁর জীবন শুরু হয়েছিল সাধারণ পরিবেশে। স্কুলের গণ্ডি পার হওয়ার আগেই ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। মুসলিম পরিবারের সন্তান এবং শৈশবে ইসলামী শিক্ষায় দীক্ষিত হয়েও তিনি বড় হয়েছিলেন একটি ধর্মনিরপেক্ষ সত্তা নিয়ে। একই সঙ্গে তার মধ্যে বিকশিত হয়েছিল একটি বিদ্রোহী সত্তা। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার তাকে রাজদ্রোহিতার অপরাধে কারাবন্দী করেছিল। তিনি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীন অবিভক্ত ভারতের বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত হয়েছিলেন। যে নজরুল সুগঠিত দেহ, অপরিমেয় স্বাস্থ্য ও প্রাণখোলা হাসির জন্য বিখ্যাত ছিলেন, ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মারাত্মকভাবে স্নায়বিক অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়ে পড়লে আকস্মিকভাবে তার সকল সক্রিয়তার অবসান হয়। ফলে ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যু অবধি সুদীর্ঘ ৩৪ বছর তাকে সাহিত্যকর্ম থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়। বাংলাদেশ সরকারের প্রযোজনায় ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে তাকে সপরিবারে কলকাতা থেকে ঢাকা স্থানান্তর করা হয়। ১৯৭৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে অসামান্য অবদানের জন্য তাকে সম্মানসূচক ডি.লিট ডিগ্রিতে ভূষিত করে। ১৯৭৬ সালে তাকে বাংলাদেশের জাতীয়তা প্রদান করা হয়। এখানেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। বিংশ শতাব্দীর বাঙালির মননে কাজী নজরুল ইসলামের মর্যাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশে তাকে “জাতীয় কবি“ হিসাবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তার কবিতা ও গানের জনপ্রিয়তা বাংলাভাষী পাঠকের মধ্যে তুঙ্গস্পর্শী। তার মানবিকতা, ঔপনিবেশিক শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধতা বোধ এবং নারী-পুরুষের সমতার বন্দনা গত প্রায় একশত বছর যাবৎ বাঙালির মানস পীঠ গঠনে ভূমিকা রেখে চলেছে। |