বিবরণ |
সকালবেলাতেই মৃত্যু সংবাদ। টুখবরাসে পেস্ট মাখাচ্ছি। অস্বস্তি নিয়েই মাখাযচ্ছি পররছি না। এ বাড়িতে তিনটা সাদা রঙের টুথব্রাস আছে যার একটা আমার। সেই একটা মানে কোন্টা আমি কখনাে ধরতে পারি না। বাকি দু'টার মালিক আমার দু'বােন। এদের চোখের দৃষ্টি ঈগলের মত তীক্ষ্ণ - এরা দূর থেকে বলতে পারে ব্রাসটা কার। এই কারণে দাঁত মাজার পর্বট। আমি সাধারণত অতি দ্রুত সেরে ফেলি। কারণ কার ব্রাস ঠিক ধরতে বােনদের চোখে পড়ার আগেই। এরা বড় যন্ত্রণা করে। আজ আমার পরিকল্পনা ছিল ধীরে সুস্থে সব কাজকর্ম করা। দাত মাজার পর্বে মিনিট দশেক সময় দেবার কথা ভাবছিলাম। সম্ভব হল না। মীরা এসে বলল, দাদা শুনেছিস, মেজে খালু সাহেব মারা গেছেন। আমি অসম্ভব অবাক এবং দুঃখিত হবার ভাব করলাম। যেন পৃথিবীর সবচে ভয়াবহ খবর এইমাত্র শুনলাম। দুঃখের ভাবটাকে আরাে জোরালাে করার জন্যে কিছু-একটা বলা দরকার। যেমন করুণ গলায় বলা, হােয়াট এ ট্রাজেডি কিংবা কি সর্বনাশ! এই দুষ্টার মধ্যে কোনটা বলব ভাবছি, তখন মীরা তীক্ষ্ণ গলায় বলল, তুই আবার আমার ব্রাস দিয়ে দাঁত ঘসছিস? আবার ? যেন এটাই বর্তমান সময়ের গ্রেট ট্রাজেডি। মেজো খালু সাহেবের মৃত্যু চাপা পড়ে গেল। আমি উদাসিন ভঙ্গিতে বললাম, এটা তাের নাকি? ব্রাসের গায়ে এম লেখা দেখছিস না? গতকালও আমার ব্রাস দিয়ে দাঁত মাজলি। এইসব কি? 'গতকাল তাের ব্রাস দিয়ে দাঁত মাজলাম ? তুই বুঝলি কি করে? 'সিগারেটের গন্ধ থেকে বুঝেছি। ভক ভক করে সিগারেটের গন্ধ বের হয়। মীরার দিকে তাকিয়ে মনে হল সে কেঁদে ফেলার একটা চেষ্টা করছে। আমার দুই বােন কাদার ব্যাপারে খুব এক্সপার্ট। অতি তুচ্ছ কারণে এবং সম্পূর্ণ অকারণে এরা কাঁদতে পারে। গত শুক্রবারে টিভি-র একটা নাটক দেখে এরা দু'জনই এমন মায়াকান্না জুড়ে দিল যে বড় চাচা ধমক দিয়ে বললেন- এসব হচ্ছে কি? এই, টিভি বন্ধ করে দে তাে। এদের নিয়ে বড় যন্ত্রণা! আসলেই বড় যন্ত্রণা। একই চিরুণী দিয়ে সেও মাথা আঁচড়াচ্ছে, আমিও আঁচড়াচ্ছি, তাতে দোষ হচ্ছে না। ব্রাসের বেলায় একেবারে কেঁদে ফেলতে হবে। |