বিবরণ |
একাত্তরের দিনগুলি: ১৯৭১ সালে বাঙালির স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের সঙ্গে জাহানারা ইমাম একাত্মতা ঘোষণা করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মৃত্যু, দুঃস্বপ্নভরা বিভীষিকার মধ্যে তার ত্যাগ ও সতর্ক সক্রিয়তা দেশপ্রেমের সর্বোচ্চ উদাহরণ হয়ে আছে। শহীদ রুমীর মা পরিণত হন শহীদ জননীতে। মুক্তিযুদ্ধে সন্তান বিয়োগের বেদনাবিধুর মাতৃহৃদয় এবং যাতনা মূর্ত হয়েছে তাঁকে কেন্দ্র করে। গত শতকের নব্বই দশকে মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত শক্তির উত্থানে জনমনে যে ক্ষোভের সঞ্চার হয় তার পটভূমিতে ১৯ জানুয়ারি ১৯৯২ সালে ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠিত হলে তিনি আহ্বায়ক নির্বাচিত হন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতকদের বিচারের দাবিতে দেশব্যাপী ব্যাপক গণআন্দোলন পরিচালনা করেন। তারই নেতৃত্বে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতিতে একাত্তরের ঘাতকদের বিরুদ্ধে পরিচালিত হয় গণআদালত। একাত্তরের ডায়েরী: ১৯১১ সালের ২০ জুন বরিশালের শায়েস্তাবাদের মাতামহের বাড়িতে সুফিয়া কামালের জন্ম। মা সাবেরা বানু এবং বাবা সৈয়দ আব্দুল বারি। পারিবারিক পরিমণ্ডলে সাহিত্য-পত্রিকা ও গল্প পড়তে-পড়তেই সাহিত্যচর্চার অনুপ্রাণিত হন।মাত্র ১৪ বছর বয়সে বরিশাল থেকে ‘তরুণ’ পত্রিকায় ‘সৈনিক বধূ’ গল্পটি তাঁর প্রথম প্রকাশিত রচনা। লেখালেখির কাজ সুফিয়াকে লুকিয়ে করতে হয়েছে-বিশেষ করে বাংলা ভাষার চর্চা ছিলো না। সীমাবদ্ধ ছিল আরবি, ফারসি, উর্দুতে। মায়ের ঐকান্তিক সহযোগিতায় সুফিয়া বাংলা বলতে, পড়তে ও লিখতে শেখেন। লুকিয়ে লুকিয়ে কবিতা রচনা করতে-করতেই সওগাতে প্রকাশিত হল তার প্রথম কবিতা ‘বাসন্তী’ যা সাথে-সাথেই সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। প্রথম গ্রন্থ রচয়িতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন ‘সাঁঝের মায়া’ কাব্যসমগ্র প্রকাশের মাঝে। কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁকে দীর্ঘ চিঠি লিখে কাব্যচর্চায় উৎসাহিত করেন। প্রকৃতপক্ষে ‘সাঁঝের মায়া’ গ্রন্থের ভূমিকাটি তাঁরই লেখা।বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ তাঁর কবিতা পড়ে তাঁকে আর্শীবাণী পাঠিয়েছিলেন এই বলে, ‘তোমার কবিত্ব আমাকে বিস্মিত করে। বাংলা সাহিত্যে তোমার স্থান উচ্চে এবং ধ্রুত তোমার প্রতিষ্ঠা আমার আশির্বাদ গ্রহণ করো।’ (সেলিম জাহাঙ্গীর, সুফিয়া কামাল, নারী উদ্যোগ কেন্দ্র, ঢাকা ১৯৯৩ পৃ-৬৪) সওগাত সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিরুদ্দীন তাঁর সাহিত্য-জীবনে উৎসাহের বিরাট উৎস হিসেবে কাজ করেছেন। আনা ফ্রাঙ্কের ডায়েরি: ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয় এবং নেদারল্যান্ডস ১৯৪০ সালে জার্মান নাৎসি বাহিনীর দখলে আসে। এরপর শুরু হয় ইহুদিদের ওপর নাৎসিদের গণহত্যা। এখানে বাস করতেন আনা ফ্রাঙ্কের বাবা অটো ফ্রাঙ্ক তাঁর পরিবার নিয়ে। জীবন বাঁচাতে পরিবারসহ মোট আটজনের শুরু হয় গুপ্তজীবন। বাবার দেওয়া জন্মদিনের উপহার হিসেবে পাওয়া একটা অটোগ্রাফ বুকে ১৯৪২ সালের জুন মাসে শুরু হয়েছিল তার ডায়েরি লেখা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা ও জার্মানি বাহিনীর নির্মমতার চিত্র ফুটে ওঠে তার রোজনামচায়। যুদ্ধ এবং মানুষের ওপর তার প্রভাব যে কত নিষ্ঠুর ও হৃদয়বিদারক ছিল তার লেখনিতে তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। জন এফ কেনেডি এক আলোচনায় বলেছিলেন, যুদ্ধের ভয়াবহতা আর ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে যারা মানবতার কথা উচ্চারণ করেছেন তাদের মধ্যে আনা ফ্রাঙ্ক তাঁকে অভিভূত করেছে। সোভিয়েত কাবি ইলিয়া এরেনবুর্গ লিখেছিলেন 'ষাট লাখ মানুষের হয়ে কথা বলেছে একটা কণ্ঠস্বর- সে কণ্ঠস্বর কোনো মহাত্মার নয়, কোনো কবির নয়, সে কণ্ঠস্বর একটা সাধারণ মেয়ের।' আনা ফ্রাঙ্কের এই ডায়েরি পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং লক্ষ লক্ষ পাঠকের হৃদয়কে আলোড়ন করেছে। জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। পৃথিবীর সর্বাধিক পঠিত বইয়ের মধ্যে আনা ফ্রাঙ্কর ডায়েরি অন্যতম। |