বিবরণ |
সুফিয়া কামাল নানা পরিচয়ে পরিচিতা, নানা গুণে গুণান্বিতা। তিনি দেশের মানুষের কল্যাণকর্মে নিজেকে মনেপ্রাণে সমর্পণ করেছিলেন এবং মানুষও তাঁকে বরণ করেছিল উজাড় করা ভালােবাসা ও অন্তরের পরম শ্রদ্ধা দিয়ে। তাঁর কর্মের ক্ষেত্র এতােটাই বিস্তৃত ছিল যে সংক্ষিপ্তভাবে সে-পরিচয় দাখিল করাটাও কোনাে সহজ কাজ নয়। জীবনভর তিনি মানুষের মুক্তির সাধনা করে গেছেন, মানব ও মুক্তি দুই অভিধাই গ্রহণ করেছিলেন অনেক বড় অর্থে এবং এর প্রতিফলন ছিল তাঁর সর্বকাজে। এমন যে মহীয়সী নারী, তাঁর কর্মসত্তা ও সাহিত্যসত্তা মিলেমিশে আছে এবং সাহিত্য-সত্তার মধ্যে প্রধান হয়ে আছে নিঃসন্দেহে তাঁর কবি পরিচিতি, কবি সুফিয়া কামাল হিসেবে তিনি অর্জন করেছেন ব্যাপক স্বীকৃতি। এতদসত্ত্বেও বাস্তব সত্য হলাে সমাজের কিংবা ইতিহাসের দিক থেকে সুফিয়া কামালের জীবন ও কর্মের মূল্যায়ন ঘটেছে বেশি এবং এমনি বিচারের ফলে, সুফিয়া কামালের সাহিত্যিক পরিচিতির ব্যাপক স্বীকৃতি সত্ত্বেও, তাঁর রচনার নিবিড় পাঠের সুযােগ ঘটেছে কম, অধিকন্ভ মূলধারার সাহিত্যবিচারে তাঁকে বুঝি কিছুটা পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়েছে, সেখানে তাঁর অবস্থান অনেকটাই যেন আড়ালে। আজীবন সাহিত্যচর্চায় ব্রতী ছিলেন সুফিয়া কামাল এবং গদ্যকার হিসেবেই তাঁর প্রথম আত্মপ্রকাশ, 'কেয়ার কাঁটা' প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৩৭ সালে, এর পরপরই ১৯৩৮ সালে প্রকাশ পায় কাব্যগ্রন্থ 'সাঁঝের মায়া, উভয় গ্রন্থই সমালােচকদের নজর কেড়েছিল এবং রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের আশীর্বাদধন্য হয়েছিলেন তিনি। সুফিয়া কামাল জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে চলেছিলেন, কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে তাঁর লেখালেখিতে কখনাে ছেদ পড়েনি। তিনি যে হৃদয়-মন- মননে একান্তভাবে সাহিত্যিক সেটা তাঁর বিরামহীন রচনাধারা বলিষ্ঠভাবে প্রকাশ করে। |